Notification texts go here Contact Us Join Now!

ঈশ্বরীয় জ্ঞান কোনটি? ৭টি অকাট্য যুক্তিতে বেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ

প্রকৃত ঈশ্বরীয় জ্ঞান কোনটি? বেদ, বাইবেল ও কুরআনের তুলনামূলক আলোচনা। ৭টি মানদণ্ডে যাচাই করে দেখুন কেন বেদই একমাত্র নির্ভুল ঐশী গ্রন্থ।
বেদ, বাইবেল ও কুরআনের মধ্যে কোনটি ঈশ্বরীয় জ্ঞান - ৭টি যুক্তিতে প্রমাণ
চিত্র: প্রাচীন বৈদিক শাস্ত্রগ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে ঈশ্বরীয় জ্ঞানের বিশ্লেষণ
সূচিপত্র (Table of Contents)

ঈশ্বরীয় জ্ঞান সম্পর্কিত একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে বিভিন্ন মতবাদের অনুসারীরা তাদের নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থকে ঈশ্বরীয় জ্ঞান বলে দাবি করে। যেমন, খ্রিস্টানরা বাইবেলকে, মুসলিমরা কুরআনকে, পারসিকরা জেন্দ আবেস্তাকে এবং হিন্দুরা বেদকে ঈশ্বরীয় জ্ঞান বলে মনে করে। এই পরিস্থিতিতে কোনটিকে ঈশ্বরীয় জ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করা উচিত এবং কোনটিকে গ্রহণ করা উচিত নয়?

এই প্রশ্নের উত্তর হলো, প্রথমত, কোনো ধর্মগ্রন্থকে শুধুমাত্র তার অনুসারীদের দাবির ভিত্তিতে ঈশ্বরীয় জ্ঞান হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সেই দাবির পরীক্ষা করতে হবে এবং কিছু মানদণ্ডের ওপর তা যাচাই করতে হবে। যে ধর্মগ্রন্থ এই মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হবে, তাকেই আমরা ঈশ্বরীয় গ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করব, অন্যথায় তা মানুষের রচিত বলে বিবেচিত হবে।

ঈশ্বরীয় জ্ঞান যাচাইয়ের মানদণ্ড

সৃষ্টির শুরুতে প্রকাশ

ঈশ্বরীয় জ্ঞান সৃষ্টির শুরুতে প্রকাশিত হওয়া উচিত, মানুষের উৎপত্তির হাজার হাজার বছর পরে নয়। ঈশ্বর সমগ্র মানবজাতির পরম পিতা এবং তিনি সকল মানুষের কল্যাণ কামনা করেন। শুধুমাত্র বেদই এমন গ্রন্থ, যা সৃষ্টির শুরুতে ঈশ্বর কর্তৃক মানবজাতির জন্য প্রদান করা হয়েছিল।

বাইবেল প্রায় ২০০০ বছর পুরনো, কুরআন প্রায় ১৪০০ বছর পুরনো, জেন্দ আবেস্তা প্রায় ৪০০০ বছর পুরনো। যখন সৃষ্টির শুরু হয়েছিল, তখন মানুষ শিক্ষা ছাড়া কিছুই শিখতে পারত না। তাই মানুষের উৎপত্তির পরপরই তাকে ঈশ্বরীয় জ্ঞানের প্রয়োজন ছিল। সত্যের জ্ঞান না থাকলে, সৃষ্টির শুরুতে যদি মানুষ কোনো অধার্মিক আচরণ করত, তবে তার শাস্তি তাকে কেন দেওয়া হবে?

নোট ১: উপরের যুক্তি দিয়ে যদি আমরা বাইবেলে বর্ণিত আদম ও হাওয়ার কাহিনির পরীক্ষা করি, তবে দেখা যায়, ঈশ্বর প্রথমে জ্ঞানের ফলের গাছ সৃষ্টি করলেন, তারপর আদম ও হাওয়ার উৎপত্তি করে তাদের সেই গাছের ফল খেতে নিষেধ করলেন। এরপর হাওয়া সাপের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে ফল খেলেন, যার ফলে তিনি জানতে পারলেন যে তারা বস্ত্রহীন। এরপর ঈশ্বর ক্রুদ্ধ হয়ে হাওয়াকে পাপী বললেন, তাকে প্রসব বেদনার অভিশাপ দিলেন এবং সাপকে সারাজীবন হামাগুড়ি দেওয়ার অভিশাপ দিলেন। এই ঘটনা অবিশ্বাস্য মনে হয়, কারণ ঈশ্বরের কাজ হলো মানুষকে জ্ঞান দেওয়া। মানুষের উৎপত্তির পর তাকে জ্ঞান না দিয়ে অভিশাপ দেওয়া বাইবেলের ঈশ্বরীয় গ্রন্থ হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

আমাদের এই বক্তব্যের সমর্থনে ম্যাক্স মুলার মহোদয় তার ধর্ম বিজ্ঞান (Science of Religion) গ্রন্থে বলেছেন: “যদি আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা কোনো ঈশ্বর হন, তবে তার পক্ষে এটা অন্যায় হবে যে তিনি মোজেসের লক্ষ লক্ষ বছর আগে জন্মগ্রহণকারী আত্মাদের তার জ্ঞান থেকে বঞ্চিত রাখেন। যুক্তি এবং ধর্মের তুলনামূলক অধ্যয়ন দৃঢ়ভাবে বলে যে ঈশ্বর মানব সৃষ্টির শুরুতেই তার ঈশ্বরীয় জ্ঞান মানুষকে দিয়েছিলেন।”

ভূগোল ও ইতিহাসের অনুপস্থিতি

ঈশ্বরীয় জ্ঞানের ধর্মগ্রন্থ সমগ্র মানবজাতির জন্য হওয়া উচিত, কোনো নির্দিষ্ট দেশের ভূগোল বা ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়া উচিত নয়। যদি আমরা কুরআন পর্যবেক্ষণ করি, তবে দেখা যায় যে এটি বিশেষভাবে আরব দেশের ভূগোল এবং মুহাম্মদ সাহেবের জীবনচরিত্রের ওপর কেন্দ্রীভূত। অন্যদিকে, বাইবেল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে এটি বিশেষভাবে ফিলিস্তিন দেশের ভূগোল এবং ইহুদিদের জীবনের ওপর কেন্দ্রীভূত।

বেদে কোনো নির্দিষ্ট দেশ, জাতি বা ব্যক্তির সুবিধার জন্য লেখা হয়নি, বরং এটি সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রকাশিত হয়েছে। বেদের উৎপত্তি সৃষ্টির শুরুতে হয়েছিল, তাই তার আগে কোনো ইতিহাসের প্রশ্নই ওঠে না। অতএব, বেদই ঈশ্বরীয় জ্ঞানের গ্রন্থ, কারণ এতে কোনো দেশের ভূগোল বা ইতিহাস নেই।

ভাষার নিরপেক্ষতা

ঈশ্বরীয় জ্ঞান সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য প্রদান করা হয়েছে, তাই এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশের ভাষায় প্রকাশিত হওয়া উচিত নয়। কুরআন আরবি ভাষায় এবং বাইবেল হিব্রু ভাষায় রচিত। অন্যদিকে, বেদের ভাষা হলো বৈদিক সংস্কৃত, যা সৃষ্টির প্রথম ভাষা।

স্বামী দয়ানন্দ তাঁর সত্যার্থ প্রকাশ গ্রন্থের সপ্তম সমুল্লাসে এই মত এভাবে প্রকাশ করেছেন: “যদি ঈশ্বর কোনো দেশের ভাষায় জ্ঞান প্রকাশ করতেন, তবে তিনি পক্ষপাতী হয়ে যেতেন... তাই ঈশ্বর সংস্কৃত ভাষায় প্রকাশ করেছেন, যা কোনো দেশের ভাষা নয়... এতে ঈশ্বর পক্ষপাতী বলে প্রমাণিত হন না এবং তিনি সমস্ত জ্ঞানের উৎস।”

পরিবর্তন ও সংশোধনের ঊর্ধ্বে

ঈশ্বর পূর্ণ ও সর্বজ্ঞ। তাঁর কোনো কাজে ত্রুটি বা অভাব থাকতে পারে না। ধর্মগ্রন্থে বাইবেলে কয়েকটি স্থানে এমন বর্ণনা পাওয়া যায় যে ঈশ্বর তাঁর ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন। একইভাবে, মুসলিমরা এখনও বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর প্রথমে জবুর, তাওরাত, ইঞ্জিল প্রকাশ করেছিলেন, তারপর সেগুলো বাতিল করে শেষে কুরআনের মাধ্যমে তাঁর সত্য ও চূড়ান্ত বাণী প্রকাশ করেছেন।

এই অজ্ঞতার কারণে যদি তারা কোনো পাপকর্ম করে থাকে, তবে তার শাস্তি কাকে দেওয়া উচিত? ঈশ্বরের একমাত্র জ্ঞান হলো বেদ, যা সৃষ্টির শুরুতে দেওয়া হয়েছিল এবং যাতে পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। যেমন ঈশ্বর অনাদি, তেমনি ঈশ্বরের জ্ঞান বেদও অনাদি।

একটি প্রশ্ন: ইসলামের অনুসারীরা কুরআনকে ঈশ্বরের চূড়ান্ত বাণী বলে মনে করে। তাদের কাছে আমাদের একটি ছোট প্রশ্ন: কোন ভিত্তিতে তারা কুরআনকে চূড়ান্ত বাণী বলছে? যে ভিত্তিতে তারা ঈশ্বরীয় জ্ঞানকে বারবার নতুন করে প্রকাশের কথা বলছে, সেই ভিত্তিতে কুরআন প্রকাশের পর জ্ঞানকে নতুন করে প্রকাশের প্রয়োজন কেন থাকবে না?

সৃষ্টিক্রমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ

ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত জ্ঞান সেই নিয়মের বিরুদ্ধ হতে পারে না, যে নিয়মগুলো পরমাত্মার সৃষ্টিতে চলছে। যে গ্রন্থ নিজেকে ঈশ্বরীয় জ্ঞান বলে দাবি করে, তাতে সৃষ্টিক্রম বা সৃষ্টির নিয়মের বিরুদ্ধ কোনো কথা থাকা উচিত নয়।

ঈশ্বরীয় জ্ঞান বলে দাবিকৃত বাইবেল এবং কুরআনে ঈশ্বরের সৃষ্টিক্রমের বিরুদ্ধ কিছু কথা পাওয়া গেছে। যেমন, বাইবেল অনুসারে যিশু খ্রিস্ট মরিয়মের গর্ভে কোনো পুরুষের সংযোগ ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন, মৃতদের জীবিত করেছিলেন। একইভাবে, কুরআন অনুসারে মূসা একটি পাথরে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তা থেকে জলের ঝর্ণা প্রবাহিত হয়েছিল, মুহাম্মদ সাহেব চাঁদকে দুই টুকরো করেছিলেন। এই ধরনের যে কোনো গ্রন্থ যদি সৃষ্টিক্রমের বিরুদ্ধ কোনো চমৎকারকে ঈশ্বরের কাজ বা মহিমা হিসেবে চিত্রিত করে, তবে তাকে ঈশ্বরীয় জ্ঞান বলা উচিত নয়। শুধুমাত্র বেদই এমন ধর্মগ্রন্থ, যাতে সৃষ্টিক্রম, সৃষ্টির ব্যবস্থা এবং নিয়মের বিরুদ্ধ কোনো কথা নেই।

বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ

আজ বিজ্ঞানের যুগ। এমন পরিস্থিতিতে, ঈশ্বরীয় জ্ঞান বলতে সেই গ্রন্থকেই বিবেচনা করা উচিত, যা বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যে ধর্মগ্রন্থ বিজ্ঞানের বিরুদ্ধ কথা বলে, তা ঈশ্বরীয় জ্ঞান বলে গ্রহণযোগ্য নয়। বাইবেলকে ধর্মগ্রন্থ মানা পাদ্রিরা গ্যালিলিওকে কারাগারে বন্দী করেছিলেন, কারণ বাইবেল অনুসারে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে বলে মনে করা হয়। কুরআনে একইভাবে অনেক বিজ্ঞানবিরোধী কথা রয়েছে, যেমন পৃথিবী সমতল এবং স্থির।

বিপরীতে, বেদে আয়ুর্বেদ (ঔষধি বিজ্ঞান), শরীরবিজ্ঞান (anatomy), রাষ্ট্রবিজ্ঞান (political science), সমাজবিজ্ঞান (social science), আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান (spiritual science), সৃষ্টি বিজ্ঞান (origin of life) ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। অতএব, শুধুমাত্র বেদই ঈশ্বরীয় জ্ঞান, অন্য কোনো গ্রন্থ নয়।

ঈশ্বরের গুণ-কর্ম-স্বভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ

ঈশ্বরীয় জ্ঞানের একটি মানদণ্ড হলো, তাতে ঈশ্বরের গুণ-কর্ম-স্বভাবের বিরুদ্ধ কোনো কথা থাকা উচিত নয়। ঈশ্বর সত্যস্বরূপ, ন্যায়পরায়ণ, দয়ালু, পবিত্র, শুদ্ধ-বুদ্ধিযুক্ত। বাইবেল, কুরআন প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থে এমন অনেক কথা রয়েছে, যা ঈশ্বরের গুণের বিরুদ্ধ।

যেমন, বাইবেলে বলা হয়েছে যে ঈশ্বর ভাষার গোলযোগ সৃষ্টি করেছিলেন যাতে মানুষ পরস্পরের সঙ্গে লড়াই করে। একইভাবে, ইসলামের অনুসারীদের বিশ্বাস যে ঈদের দিন নিরীহ পশুর কোরবানি দিলে ঈশ্বরের কাছে পুণ্য লাভ হয়, এটি ঈশ্বরের দয়ালু গুণের বিরুদ্ধ। অতএব, শুধুমাত্র বেদই ঈশ্বরের গুণ-কর্ম-স্বভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার কারণে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্মগ্রন্থ।

উপসংহার ও বেদের নিজস্ব সাক্ষ্য

এই নিবন্ধে প্রদত্ত যুক্তিগুলোর মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয় যে বেদই ঈশ্বরীয় জ্ঞান। শেষে, বেদ নিজেই তার ঈশ্বরীয় জ্ঞান হওয়ার সাক্ষ্য দেয়। বেদের অসংখ্য মন্ত্রের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়টি প্রমাণ করতে পারি, যেমন:

  • সমস্ত কিছুর পূজনীয়, সৃষ্টিকালে সবকিছু প্রদানকারী এবং প্রলয়কালে সবকিছু ধ্বংসকারী সেই পরমাত্মা থেকে ঋগ্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ এবং যজুর্বেদ উৎপন্ন হয়েছে। (ঋগ্বেদ ১০.৯০.৯, যজুর্বেদ ৩১.৭, অথর্ববেদ ১৯.৬.১৩)
  • সৃষ্টির শুরুতে বেদবাণীর পতি পরমাত্মা পবিত্র ঋষিদের আত্মায় তাঁর প্রেরণার মাধ্যমে বিভিন্ন পদার্থের নাম বর্ণনাকারী বেদবাণী প্রকাশ করেছেন। (ঋগ্বেদ ১০.৭১.১)
  • বেদবাণীর শব্দ ও অর্থের সম্পর্ক থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান যজ্ঞ, অর্থাৎ সকলের পূজনীয় পরমাত্মার মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়। (ঋগ্বেদ ১০.৭১.৩)
  • আমি (ঈশ্বর) এই কল্যাণকর বেদবাণী সকল মানুষের কল্যাণের জন্য প্রদান করেছি। (যজুর্বেদ ২৬.২)
  • ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদ স্কম্ভ, অর্থাৎ সর্বাধার পরমেশ্বর থেকে উৎপন্ন হয়েছে। (অথর্ববেদ ১০.৭.২০)
  • পরমাত্মার নাম জাতবেদা এই কারণে, কারণ তাঁর থেকে তাঁর বেদরূপী কাব্য উৎপন্ন হয়েছে। (অথর্ববেদ ৫.১১.২)

আসুন, ঈশ্বরের সত্য বাণী বেদকে জানি।
বেদের পবিত্র বাণীগুলো নিজের জীবনে গ্রহণ করে নিজের জীবনের উন্নতি সাধন করি।


Related Posts

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.