Notification texts go here Contact Us Join Now!

সত্যিকারের নেতা হওয়ার পথ: স্বামী শ্রদ্ধানন্দের জীবন থেকে নেওয়া কিছু শিক্ষা

কীভাবে একজন সত্যিকারের নেতা হওয়া যায়? জানুন আর্য সমাজের মহান নেতা স্বামী শ্রদ্ধানন্দের জীবনের কিছু দুর্লভ ঘটনা থেকে নেতৃত্ব ও ত্যাগের শিক্ষা।
স্বামী শ্রদ্ধানন্দের জীবন থেকে নেতৃত্বের শিক্ষা
চিত্র: স্বামী শ্রদ্ধানন্দের জীবন ও কর্ম - সত্যিকারের নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
সূচিপত্র (Table of Contents)

সত্যিকারের নেতা হওয়ার পথ: স্বামী শ্রদ্ধানন্দের জীবন থেকে শিক্ষা

আজকাল সবাই নেতা হওয়ার জ্বরে ভুগছে। কিন্তু সত্যিকারের নেতা হয়ে ওঠা বিরল কিছু মানুষেরই ভাগ্যে জোটে।

আর্য সমাজের ইতিহাসে অনেক মহান ও সত্যিকারের নেতা তাদের জীবন, তপস্যা ও দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শুধু নিজেদের জীবনেরই উন্নতি করেননি, বরং অন্যদের জীবনেও বিপ্লবের সূচনা করেছেন। স্বামী শ্রদ্ধানন্দ, লালা লাজপত রায়, মহাত্মা নারায়ণ স্বামী, স্বামী স্বতন্ত্রানন্দজি মহারাজ এমন কিছু মহান আত্মা, যাদের জীবনচরিত আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়।

স্বামী শ্রদ্ধানন্দজির জীবনকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে জানা যায়, তিনি মহান নেতা হয়েছিলেন তাঁর ঈশ্বরের প্রতি অটল বিশ্বাস এবং সংকটে পড়া আর্য সমাজের সদস্যদের যথাসম্ভব সাহায্য করার কারণে। তিনি কখনো আর্য সমাজের বিরোধীদের সঙ্গে শাস্ত্রার্থে লিপ্ত হতেন, কখনো আদালতে গোপীনাথ নামক প্রতারকের মুখোশ খুলতেন, কখনো বিধবা বিবাহের সমর্থনে বিরোধী পঞ্চায়েতকে নিষ্ক্রিয় করে দিতেন, কখনো বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আর্য কর্মীদের মামলাকে নিজের মামলা মনে করে লড়তেন, কখনো আর্ষ শিক্ষাপদ্ধতির উন্নতির জন্য গলায় ঝোলা ঝুলিয়ে দান সংগ্রহে বেরিয়ে পড়তেন, কখনো গুরুকুলের জন্য জঙ্গলে গিয়ে নিজের সমস্ত সম্পত্তি দান করতেন, কখনো чому আবার চাঁদনি চকে অংরেজদের বিরুদ্ধে বুক খুলে দাঁড়িয়ে যেতেন, কখনো হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য জামা মসজিদের মিম্বর থেকে বক্তৃতা দিতেন, কখনো শুদ্ধি আন্দোলনের মহারথী হয়ে কঠিনতম সংকটের মুখোমুখি হতেন।

তাঁর জীবনের কিছু ঘটনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, কীভাবে একজন সত্যিকারের নেতা তৈরি হয়।

মহাত্মা মুংশীরাম ও কপুরথলায় বৈদিক সংস্কার

১৮৯৪ সালে মহাত্মা মুংশীরাম ও কয়েকজন সজ্জনের সহযোগিতায় কপুরথলায় আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে আর্য সমাজের কার্যক্রম লালা অমরনাথ সরনার দোকানে হতো। শহরের কোতোয়াল সবসময় লালা অমরনাথকে হয়রানি করত এবং হুমকি দিত যে, আর্য সমাজের প্রচার করলে তাকে জেলে যেতে হবে। কিছুকাল পর সুলতানপুরে আর্য সমাজ ভাড়া নেওয়া হয় এবং সেখানে সাপ্তাহিক সৎসঙ্গ শুরু হয়। ১৯১০ সালে আর্য সমাজের মন্দির নির্মিত হয়। ১৯২৪ সালে এই মন্দিরে স্বামীজি শত শত হরিজনের শুদ্ধি করেন।

১৯০১ সালে লালা অমরনাথের মা মারা যান। তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি মায়ের দাহ সংস্কার বৈদিক রীতি অনুসারে করবেন। এই খবরে শহরে হইচই পড়ে যায়। পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে বলে, বৈদিক রীতিতে সংস্কার করলে তাকে আজীবন কারাবাস করতে হবে। এই খবর জালন্ধর ও লুধিয়ানার আর্য সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। মহাত্মা মুংশীরাম সন্ধ্যা চারটায় কয়েকজন আর্যের সঙ্গে লালা অমরনাথের বাড়িতে পৌঁছান। শবযাত্রা বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। কোতোয়াল শবযাত্রা আটকান। মহাত্মা মুংশীরাম বলেন, “কোন আইনে আপনি শবযাত্রা আটকাচ্ছেন? জানেন না শবযাত্রা আটকানো নিষেধ?” এই কথা শুনে কোতোয়াল পিছু হটে। বাজার থেকে শ্মশান পর্যন্ত পুলিশ ঘেরাও করে। শ্মশানে প্রচুর পুলিশ ও রিয়াসতের কর্মকর্তারা হাতির পিঠে চড়ে সংস্কার দেখতে আসেন। শত শত দর্শক উপস্থিত ছিলেন। দাহ সংস্কার বৈদিক রীতিতে সম্পন্ন হয়। সংস্কারের পর পৌরাণিক পণ্ডিতরা আর্য সমাজের সদস্যদের সামাজিকভাবে বয়কট করে। দুই মাস ধরে আর্যদের খাদ্য জালন্ধর থেকে আসত।

মহাত্মা মুংশীরামের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় উত্তর ভারত, বিশেষ করে পাঞ্জাবের গলি-গলিতে আর্যদের উত্থান ঘটে, যাদের সহযোগিতায় তিনি গুরুকুল কাঙড়ির মতো বিপ্লবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সমর্থ হন।

স্বামী শ্রদ্ধানন্দ ও মহাশয় চিরঞ্জীলালের মামলা

আর্য সমাজের প্রখ্যাত প্রচারক মহাশয় চিরঞ্জীলাল পণ্ডিত লেখরামের মতো বৈদিক ধর্মের প্রচারে নিজের তন, মন ও ধন উৎসর্গ করেছিলেন। ১৮৭৭ সালে ১৯ বছর বয়সে তিনি লুধিয়ানায় স্বামী দয়ানন্দের দর্শন পান এবং বৈদিক ধর্মের প্রচারের সংকল্প নেন। কিন্তু তাঁর বিবাহ হয়ে গিয়েছিল, এবং পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। ১০-১২ বছর ধৈর্য ধরে তিনি দোকানদারি করে পরিবারের ভরণপোষণ করেন। ছোট ভাই দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য হলে তিনি প্রচারে বেরিয়ে পড়েন। তিনি পাঞ্জাবি ভাষায় হরফ (গান) রচনা করে উর্দুতে ছাপিয়ে গান গেয়ে প্রচার করতেন। তার উপর একটি মামলা হয়, যার ফলে তাকে চার মাসের জেল ও ৫০ টাকা জরিমানার সাজা হয়। মহাত্মা মুংশীরাম তার পক্ষে আপিল করেন, যার ফলে তিনি মুক্তি পান, তবে কিছুদিন তাকে জেলে কাটাতে হয়। এই কারাবাস তাঁর প্রচারকে দ্বিগুণ শক্তি দেয়। সত্যিকারের নেতা তিনিই হন, যিনি সহকর্মীদের দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকেন।

গড়ওয়ালে দুর্যোগে সাহায্যকার্য

১৯১৮ সালে গড়ওয়ালে দুর্ভিক্ষের সময় স্বামীজি দুর্যোগপীড়িতদের জন্য বিশাল সাহায্যকার্যের আয়োজন করেন। তিনি গুরুকুলের ছাত্রদের এই মহৎ কাজে অংশ নিতে আহ্বান জানান। তাঁর আদেশে মহাবিদ্যালয় বিভাগের প্রায় সব ব্রহ্মচারী সেখানে পৌঁছে স্বামীজির নেতৃত্বে কাজ শুরু করেন। তিনি পৌড়ি, রুদ্রপ্রয়াগ, উত্তরকাশী, কেদারনাথসহ বিভিন্ন স্থানে যান। পীড়িতদের প্রতি তাঁর হৃদয় ছিল সহানুভূতি ও সংবেদনশীলতায় পূর্ণ। তাদের দুঃখ দেখে তাঁর চোখে জল আসত, তবু তিনি তাদের দুঃখ নিবারণে ব্যাকুল থাকতেন। কখনো তিনি ১৯-২০ মাইল আমাদের সঙ্গে হেঁটে যেতেন, নিজের আরামের কথা না ভেবে। সেই সময় গড়ওয়ালের একটি স্থানীয় পত্রিকায় একজন আর্য সমাজের সদস্য স্থানীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যা নিয়ে স্থানীয় জনতার মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। কিছু অবিবেচক গড়ওয়ালি স্বামী শ্রদ্ধানন্দের উপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন এবং পৌড়িতে একটি সভা ডাকেন। তাঁর কিছু ভক্ত তাকে পৌড়ি না যাওয়ার পরামর্শ দেন, যাতে উত্তেজিত জনতা তার উপর আক্রমণ না করে। কিন্তু নির্ভীক বীর সন্ন্যাসী স্বামী শ্রদ্ধানন্দ রুদ্রপ্রয়াগ থেকে পৌড়ি পৌঁছে সেই সভায় উপস্থিত হন। তাঁর উপস্থিতিতে উত্তেজিত পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়, এবং তাঁর বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক প্রস্তাবের পরিবর্তে তাঁর সেবার জন্য সর্বত্র প্রশংসা শুরু হয়। এটিই ছিল তাঁর নির্ভীকতার আদর্শ, যা ঈশ্বরের প্রকৃত ভক্ত এই বীর সন্ন্যাসী প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রদর্শন করেছিলেন এবং সকল বিরোধী শক্তির উপর জয়ী হয়েছিলেন।

ছাত্রদের প্রতি তাঁর উদারতা

তিনি ছাত্রদের প্রতি কতটা যত্নশীল ছিলেন, তার একটি উদাহরণ শুনুন। গুরুকুলের একটি ক্লাসে সত্যপ্রিয় নামে এক ছাত্র কোনো অপরাধের জন্য তাঁর দ্বারা গুরুকুল থেকে বহিষ্কৃত হয়। কিছুকাল পর রেঙ্গুনের এক ব্যবসায়ী বন্ধু তাকে চিঠি লিখে একজন লেখকের প্রয়োজন জানান। স্বামীজি সত্যপ্রিয়কে চিঠি দিয়ে রেঙ্গুনে যেতে বলেন এবং তার জন্য ৮০-১০০ টাকার বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।

উপসংহার

এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো এটি বোঝানো যে, একজন সত্যিকারের নেতা তৈরি হন তাঁর জমির কর্মীদের বিপদের সময় সহযোগিতা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে, নয়তো নিজের নামের আগে ‘নেতা’ শব্দ জুড়ে দিয়ে।


Related Posts

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.